SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - খাদ্যের কাজ ও উপাদান | NCTB BOOK

আমাদের দৈনিক খাদ্যের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানগুলোর মধ্যে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এই উপাদান অন্যান্য উপাদানের চেয়ে দামেও সস্তা। শরীরে তাপ ও শক্তি সরবরাহের জন্য গুরুত্ব বেশি।

কার্বোহাইড্রেটের গঠন –

সকল কার্বোহাইড্রেটই কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন এই তিনটি মৌলিক পদার্থের সবন্বয়ে গঠিত। এদের মধ্যে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের পরিমাণ সাধারণত ২ঃ১ অনুপাত অর্থাৎ এইগুলো পানিতে যে অনুপাতে থাকে কার্বোহাইড্রেটেও সেই অনুপাতে থাকে। তাই কার্বোহাইড্রেটকে হাইড্রেট অব কার্বন (Hydrate of carbon) বা কার্বনের পানি বলে। অর্থাৎ বলা যায় কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনযুক্ত কোনো পদার্থে যদি হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন ২ঃ১ অনুপাতে থাকে তবে ওই পদার্থকে সাধারণত কার্বোহাইড্রেট বলা হয়।

কার্বোহাইড্রেটের শ্রেণিবিভাগ – কার্বোহাইড্রেটকে প্রধানত ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা -

(১) মনোস্যাকারাইড

(২) ডাইস্যাকারাইড

(৩) পলিস্যাকারাইড

 

১। মনোস্যাকারাইড–যে সব কার্বোহাইড্রেট একটি মাত্র সরল শর্করার অণু দিয়ে গঠিত এবং একে আর্দ্রবিশ্লেষিত করলে ক্ষুদ্রতম কোনো সরল শর্করার অণু পাওয়া যায় না তাকে মনোস্যাকারাইড বা এক- শর্করা বলে। যেমন- গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ, গ্যালাকটোজ ।

(ক) গ্লুকোজ(Glucose) - এটি কার্বোহাইড্রেটের সবচেয়ে বেশি পরিচিত সরল হাইড্রোকার্বন। গ্লুকোজ পাওয়া যায় দানা শস্যে, কিছু পরিমাণ মূলে, আঙুরে ও বিভিন্ন ফলে।

(খ) ফ্রুকটোজ (Fructose)- মধু, পাকা মিষ্টি স্বাদের ফলে এবং কিছু কিছু সবজিতে ফ্রুকটোজ - পাওয়া যায়।

(গ) গ্যালাকটোজ (Galactose) - দুধের চিনি (ল্যাকটোজ) ভেঙে গ্যালাকটোজ পাওয়া যায়। উদ্ভিদে

গ্যালাকটোজ পাওয়া যায় না । ২। ডাইস্যাকারাইড যেসব কার্বোহাইড্রেটকে আর্দ্রবিশ্লেষণ করলে ২টি মনোস্যাকারাইড বা সরল শর্করা পাওয়া যায় তাকে ডাইস্যাকারাইড বলে। যেমন সুক্রোজ, ল্যাকটোজ ও মলটোজ ।

 

(ক) সুক্রোজ (Sucrose)- সাধারণ চিনি, আম, বিট, নানা প্রকার সবজি ও ফলের রসে সুক্রোজ পাওয়া যায়। সুক্রোজ ভাঙলে ১ অণু গ্লুকোজ ও ১ অণু ফ্রুকটোজ পাওয়া যায় ৷

সুক্রোজ

গুকোজ

+

ফ্রুকটোজ

 

(খ) ল্যাকটোজ (Lactose) - দুধে এই চিনি পাওয়া যায়। ল্যাকটোজকে ভাঙলে এক অণু গ্লুকোজ ও এক অণু গ্যালাকটোজ পাওয়া যায় ।

ল্যাকটোজ (দুধের চিনি)

গুকোজ

+

গ্যালাকটোজ

 

(গ) মলটোজ (Maltose) - স্টার্চ ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত হওয়ার মধ্যবর্তী স্তরে মলটোজের উৎপত্তি হয়ে থাকে। মল্টোজ ভাঙলে দুই অনু গ্লুকোজ পাওয়া যায়।

মল্টোজ

গুকোজ

+

গুকোজ

৩। পলিস্যাকারাইড

যে সকল কার্বোহাইড্রেটকে আর্দ্রবিশ্লোষিত করলে অনেক একক মনোস্যাকারাইড পাওয়া যায়, তাকে পলিস্যাকারাইড বা বহু শর্করা বলা হয়। যেমন- (ক) স্টার্চ (খ) গ্লাইকোজেন ও (গ) সেলুলোজ । (ক) স্টার্চ (Starch) প্রাণিজগতের শক্তির প্রাথমিক উৎস হলো স্টার্চ বা শ্বেতসার। উদ্ভিদে - কার্বহাইড্রেট স্টার্চ হিসেবে সঞ্চিত হয়। এদের ভাঙলে অনেক গ্লুকোজ অণু পাওয়া যায়। চাল, গম, আলু, কচু ক্যাসাভা ইত্যাদি খাদ্যের অধিকাংশই স্টার্চ। দেহের মধ্যে এই স্টার্চগুলি এনজাইমের সাহায্যে আর্দ্রবিশ্লেষিত হয়ে গ্লুকোজ উৎপন্ন করে। প্রানিজগতে স্টার্চ পাওয়া যায় না ৷

স্টার্চ

-

গ্লুকোজ n

+

গ্লুকোজ n

এখানে, n - অনেক অণু

(খ) গ্লাইকোজেন (Glycogen) – প্রাণী দেহে সঞ্চিত কার্বোহাইডেটের নাম গ্লাইকোজেন। অনেক গ্লুকোজ অণুর সমন্বয়ে গ্লাইকোজেন হিসেবে প্রাণীর যকৃতে ও পেশিতে সঞ্চিত থাকে। উদ্ভিজ জগতে গ্লাইকোজেন পাওয়া যায় না। আমরা যখন অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকি বা কঠিন পরিশ্রম করি তখন গ্লাইকোজেন ভেঙে গ্লুকোজ তৈরি হয় এবং আমাদের প্রয়োজন মেটায়।

গ্লাইকোজেন

-

অনেক গ্লুকোজ অণু

(গ) সেলুলোজ (Cellulose ) - সেলুলোজ অনেক গ্লুকোজ অণুর সমন্বয়ে গঠিত। এই উপাদান কেবল উদ্ভিদে পাওয়া যায়, প্রাণিজগতে পাওয়া যায় না। খাদ্য শস্য যেমন- ধান, গম, যব, ছোলা এবং শাকসব্জি প্রভৃতির উপরের কঠিন অংশটা সেলুলোজ। মানবদেহে সেলুলোজ ভাঙার মতো এনজাইম না থাকায় আমাদের দেহ সেলুলোজকে ভাঙতে পারে না। তবে মল নিষ্কাশণে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

গুকোজ

গুকোজ

--সেলুলোজ--

গুকোজ

গুকোজ

 

কার্বোহাইড্রেটের খাদ্য উৎস- নিচে খাদ্যগুলোকে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেশি থেকে কম অনুযায়ী সাজানো

 

১। চিনি, গুড়, মিছরি, ক্যান্ডি, চকলেট, মিষ্টি

২। সাগু, এরারুট।

৩। চাল, ভুট্টা, যব, গম

৫। বিভিন্ন ধরনের শুকনা ফল যেমন- খেজুর, কিসমিস ইত্যাদি।

৬। বিভিন্ন ধরনের ডাল, সয়াবিন, বাদাম।

৭। টাটকা ফল, আঙ্গুর, কলা, আপেল, আম, আনারস ইত্যাদি।

৮। সবুজ শাকসবজি, যেমন- লালশাক বা পুঁইশাক, কলমি শাক, পালং শাক, বাঁধাকপি, পটোল, কুমড়া ইত্যাদি

দৈনিক প্রয়োজনীয় ক্যালরির ৫০-৬০ ভাগ কার্বোহাইডেট জাতীয় খাদ্য থেকে গ্রহণ করা উচিত

কার্বোহাইড্রেটের কাজ -

() দেহে তাপ বা শক্তি সরবরাহ করাই কার্বোহাইড্রেটের প্রধান কাজ। এজন্য একে জ্বালানি খাদ্য বলে।

গ্রাম কার্বোহাইডেট থেকে কিলো ক্যালরি শক্তি উৎপন্ন হয়।

() কার্বোহাইড্রেটসমূহ স্নেহ পদার্থ সহনে সহায়তা করে আমাদের কিটোসিস নামক রোগ হতে রক্ষা করে।

() প্রোটিন, ভিটামিন খনিজ লবণ গ্রহণে সহায়তা করে।

() অল্প প্রোটিনযুক্ত খাদ্যের প্রোটিনকে ভাগ উৎপাদনের কাজ থেকে বিরত রাখে, ফলে প্রোটিনের খরচ হয় না। কার্বোহাইড্রেটের এই কাজকে প্রোটিনের মিতব্যয়ী কাজ (Protein sparing action) বলা হয়।

 () কার্বোহাইড্রেটের উপস্থিতিতে এক প্রকার জীবাণু অন্ত্রে ভিটামিন 'কে' এবং ভিটামিন 'বি' উৎপন্ন করে ওই সমস্ত ভিটামিনের অভাব কিছুটা পূরণ করে থাকে

() সেলুলোজ জাতীয় কার্বোহাইড্রেট কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

() কার্বোহাইড্রেট যকৃৎকে ব্যাকটেরিয়া ঘটিত বিষক্রিয়া হতে রক্ষা করে।

() মস্তিস্কের কাজ সচল রাখার জন্য একমাত্র জ্বালানি হিসেবে গ্লুকোজ জাতীর কার্বোহাইড্রেট-এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

খাদ্যে কার্বোহাইড্রেটের অভাবের ফল- -

() কার্বোহাইড্রেটের অভাবে দেহে তাপশক্তির ঘাটতি হয়। ফলে কাজ করার ক্ষমতা কমে যায়।

() আহারের সেলুলোজ জাতীয় কার্বোহাইড্রেটের অভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়

ফাজ - কোন ধরনের কার্বোহাইড্রেট বেশি উপকারী এবং কেন?

 

Content added || updated By
Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.